বাগান করুন জৈব পদ্ধতিতে

বাগান করুন জৈব পদ্ধতিতে  
বন্ধুরা শীতের শুরু মানেই উঠোনে, বাগানে, ছাদে ফুলের সমারোহ।
এছাড়া শীতকালীন সব্জির প্রতি  আবেগ আর দুর্বলতা তো বাঙালির আজন্মকালের। তাই বলছি, বন্ধুরা, শুরু করে দিন এখনই, চারা রোপন। 
এটাই উপযুক্ত সময় এবছর বৃষ্টিপাত ভালই হয়েছে আশা করা যায় এবার চাষাবাদ  শষ্যশ্যামল ফুলেফলে ধরিত্রী মা ভালই সেজে উঠবেন আপনার একটু সচেতন যত্নে,,😊
এইসময় দিনের তাপমাত্রা মোটামুটি ভালোই এবং রাতের তাপমাত্রাও মধ্যম মানের, সাথে শিশির, যা শীতকালীন গাছের পক্ষে অনুকূল।
মাটি তৈরী 
 টবের মাটির ক্ষেত্রে 60% (ভাগ) মাটি নিয়ে, মাটিটা ভেঙে গুঁড়িয়ে নেবেন। 
তার সাথে 30% (ভাগ) জীবাণু সমৃদ্ধ জৈব সার, এর সাথে
 মাটিতে মেশাতে হবে 5% (ভাগ) নিম খইল। এটা পি়পড়ে, পোকামাকড় (Nematodes) থেকে গাছের শেকড়কে রক্ষা করে (এটা বাড়িতেও বানাতে পারেন নিমফল পাতা শুকনো করে মিক্সার মেসিনে গুঁড়িয়ে নিলেই হবে)
এবারে ওই মাটিতে মেশাতে হবে 5% (ভাগ) বালি, এটা মাটির কনাগুলিকে একে অপরের সাথে মিশে যেতে দেয়না ফলে মাটির মধ্যে হাওয়া চলাচল বৃদ্ধি হয় অর্থাৎ নাইট্রোজেনের বৃদ্ধি ঘটায়, সঠিক জীবাণু সমৃদ্ধ জৈব সার ব্যবহারের আরেকটা সুবিধাজনক দিক হলো এটা মেশালে আর আলাদা করে ফাংগিসাইড দেবার প্রয়োজন পড়ে না।
একটা কথা জেনে রাখুন সঠিক জীবাণু সমৃদ্ধ জৈব সার গাছকে যে পুষ্টিকর সুষম খাদ্য সরবরাহ করে সেটাই সব নয় একটা সঠিক জীবাণু সমৃদ্ধ জৈব সার মাটির জলধারন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং মাটি কে আলগা রেখে মাটিতে বাতাস চলাচলে সাহায্য করে যা গাছের জন্য অত্যন্ত জরুরী। অতএব নো টেনশন শুধুই একশান।
বীজ তৈরী
যদি বীজ থেকে চারা তৈরী করার পরিকল্পনা থাকে তাহলে খুব তাড়াতাড়ি প্রস্তুতি নিতে হবে।
 দু একদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিন।
এর জন্যে 80% (ভাগ) মাটি (মাটি আগে থেকে ভেঙে গুঁড়িয়ে নেবেন এতে মাটির প্রতিটি অংশ থেকে গাছ খাদ্যে সংগ্ৰহ করতে পারবে, এছাড়া  সার ও অনান্য উপাদান গুলি মাটির সঙ্গে খুব ভালোভাবে মিশে যেতে পারবে।) তার সাথে 10% (ভাগ) জীবাণু সমৃদ্ধ জৈব সার, আর 10% (ভাগ) বালি মিশিয়ে ট্রেতে ভরে বীজ ছড়িয়ে দিন। উপযুক্ত ট্রে না থাকলে ফেলে দেওয়া পিজবোর্ড কার্টুন মাঝ বরাবর কেটে দু ভাগ করে চার ইঞ্চি করে মাটি ভরে দিন। এরজন্য  ডিম রাখার যে ট্রেগুলো হয় তার প্রত‍্যেকটি খোপে দু তিন চামচ মতো তৈরী করা মাটি দিয়ে একটি একটি করে বীজ ফেলে দিলেও হবে।
কার্টুন  কিংবা ট্রে সব ক্ষেত্রেই বীজ দেওয়ার পর উপরে মিহি মাটির স্তর দিয়ে দেবেন।
জল সবসময় স্প্রে করে দেবেন, জল যেন না জমে, আর হালকা রোদ যুক্ত জায়গায় রাখুন নাহলে ওপরে সাদা পলিথিন টাঙিয়ে দিন। দিনকুড়ি হলেই চারা অন‍্যত্র বসাতে পারবেন।
পরিচর্যা
গাছ আমাদের জীবন আর গাছের জীবন মাটি-জল-আলো।
এটা সেই ছোট বেলা থেকেই আমরা জানি, তো প্রথমেই আমরা মাটির উৎকর্ষ বৃদ্ধিতে গাছকে সাহায্য করবো।
😁 যত ইচ্ছে নতুন গাছ পুঁতুন, গাছ দেবে পেনশন,,😊
গাছ লাগানোর পদ্ধতি 
টবে গাছগুলো লাগানোর পর জল দিয়ে মাটিটা ভালো করে ভিজিয়ে দিন তিনেক শেডযুক্ত জায়গায় রেখে দিন, তখনই আবার জল দেবেন যখন দেখবেন মাটি শুকিয়ে গেছে, কখনোই রোজ জল দেবেন না এই সময়। 
গাছের বয়স একমাস হলে আবারও সঠিক জীবাণু সমৃদ্ধ জৈব সার ব্যবহার করুন এবং সপ্তাহে অথবা 15 দিন অন্তর এক বার করে নিমতেল স্প্রে করুন।
জমির ক্ষেত্রেঃ
 গাছ লাগাতে হলে মাটি ভালো করে কুপিয়ে নিন যতটা সম্ভব ঝুরঝুরে করুন, জীবাণু সমৃদ্ধ জৈব সার ছড়িয়ে কুপিয়ে দিন, তার পরে ভালোভাবে জল সেচ দিন, এরপর দুইতিন দিন অন্তর অন্তর মাটিটা উলটেপালটে দিন। দিন দশ এরম থাকার পর মাটিটা লেবেল করে নিয়ে,, সাঁ সাঁ করে গাছ পুঁতুন, নো টেনশন😛
যদি গাছ জমির মাটিতে লাগান তাহলে দিনের বেলায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিলে গাছ ঝিমিয়ে যায় না আবার রাত্রিতে খুলে দেবেন, এটা গাছ লাগানোর পর দু তিন দিন করলেই হবে। 
যদি সেটা সম্ভব না হয় তাহলে লক্ষ্যে রাখবেন গাছের গোড়ার মাটিটা যেন শুকনো না হয়।
মনে রাখবেন গাছ বসানোর এক মাস পরে থেকে আবারো তাকে খাদ্যের জোগান দিতে হবে। সাধারণত মোরসুমী ফুলের ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে গাছকে খাদ্যের যোগান দিতে হবে,  তবে যে সমস্ত ফুল গাছ সারাবছর থাকে সেগুলোতে মাসে একবার সার দিলেই চলে, আর সবজির ক্ষেত্রে সাধারণত মাসে একবার করে সার দেওয়া হয় ,তবে টমেটোর মত উচ্চ ফলনশীল গাছেতে সপ্তাহে একবার করে সার দেওয়াটাই উচিত।
রোগ_পোকামাকড় - উড়ো পোকা এবং অন্যান্য পোকা থেকে গাছকে রক্ষা করার জন্যে ফুল গাছের ক্ষেত্রে "নিমতেল" অথবা ডিটারজেন্ট পাউডার জলে গুলে স্প্রে ব্যবহার করা যায়, সব্জির ক্ষেত্রে নিমতেল, ডিটারজেন্ট পাউডার, ছাড়াও ছাইগুড়ো ব‍্যাবহার করুন এতেই সমস্যা যাবে,
সব্জির ছিদ্রকারী পোকার ক্ষেত্রে রসুন থেঁতো করে জলে গুলে ছেঁকে স্প্রে করুন।
প্রয়োজনে ফাঙ্গিসাইড হিসাবে ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি (ইহা একটি জৈব ছত্রাকনাশক) বা হলুদ গুলে স্প্রে করুন।
গাছের গোড়ায় পিঁপড়ে  হলে ফটকিরির জল স্প্রে করুন, গ‍্যামাক্সিন গুলেও স্প্রে করতে পারেন।
(নিমতেলটা সপ্তাহে এক বার করে দিলে আশাকরা যায় বাকি কিছু লাগবে না)
এগুলো বিকেলের দিকে স্প্রে করবেন।
গাছের গোড়ার মাটি মাঝে মধ্যে খুঁড়ে দেবেন। মাটির কণাগুলো যাতেে পরস্পরের মধ্যে ফাঁক বজায় রাখতে পারে এবং যার ফলে মাটিতে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, চেষ্টা করবেন খোড়ার দিন জল না দেওয়ার তাতে মাটিতে হাওয়াটা ভালো চলচল করবে, যদি দেখেন গাছ ঝিমিয়ে যাচ্ছে তাহলে অল্প জল দিয়ে দেবেন।
জৈব সার প্রয়োগের সময়েও অল্প মাটি খুঁড়ে সার প্রয়োগ করুন।
দেখুুন আজকের দিনে এটা পরীক্ষিত সত্য যে সঠিক গুনসম্পন্ন জীবাণু সমৃদ্ধ জৈব সার অন্য যে কোন বাজার চলতি পুরানো প্রচলিত যে কোন জৈব সারের তুলনায় অনেক অনেক বেশি ভালো ভাবে সুষম খাদ্যের যোগান দিতে পারে। তা ছাড়াও জীবাণু সমৃদ্ধ জৈব সার দুষ্ট ছত্রাক নাশক। এই সব বিভিন্ন কারণে এই ধরনের সার এর বিকল্প কিছু নেই এই মুহূর্তে।।
বিঃদ্রঃ - টবে ভুলেও রাসায়নিক সার ইউজ করবেন না। বাজার থেকে যা কিনছেন সবেতেই তো রাসায়নিক ব্যবহার করা আছে। একবার নিজের বাড়ির বাচ্চাদের কথা বা নিজেদের কথা একটু ভাবুন রাসায়নিক এর ব্যবহার কিন্তু সত্যি ই ভালো নয়।
গাছ শুধু ফুসফুসের অক্সিজেন দেয়না, মনের অক্সিজেনও দেয়,
তাই গাছ লাগান, একটু খানি যত্নের পরিবর্তে অনেক বেশি ভালোবাসা পান।
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন🙏


No comments:

Post a Comment